প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সিআরআইয়ের অন্যতম ট্রাস্টি, হেড অব স্ট্র্যাটেজি ও প্রোগ্রাম রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিকে চিন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। এর আগে বাংলাদেশ ও চিনের ক্ষমতাসীন দল দুটির নেতারা পারস্পরিক আমন্ত্রণে একাধিকবার দুই দেশ সফর করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই দৌহিত্র জয় ও ববিকে এই প্রথমবারের মতো আমন্ত্রণ জানাল চিনের কমিউনিস্ট পার্টি। তবে জানুয়ারিতে এই আমন্ত্রণ এলেও এখনো সফরের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
Read More News
জানা গেছে, জয় ও ববির চিন সফরের মধ্য দিয়ে ঢাকা ও বেইজিংয়ের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে চান চিনের ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা। আঞ্চলিক রাজনীতিতে বাংলাদেশ ও চিনের মধ্যকার সম্পর্ক এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক ঘনিষ্ঠ বলে দাবি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের। তবে পার্শ্ববর্তী একটি বৃহৎ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জোরালো সম্পর্কের বিষয়ে সব সময়ই সজাগ ও সতর্ক চিন। সে কারণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি এমন উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উইংয়ের নেতারা জানান, চিনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিবছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে। গত বছরও আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে চিন সফর করে। আবার আওয়ামী লীগের আমন্ত্রণে গত বছর মার্চে প্রথমবার এবং নভেম্বরে দ্বিতীয়বার চিনের কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। এর মধ্যে নভেম্বরে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির বিশেষ দূত ও দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার চেন ফেংজিয়াংয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের একপর্যায়ে চিনের উপমন্ত্রী চেন ফেংজিয়াং প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে চিন সফরের আমন্ত্রণ জানান। বৈঠকের পাশাপাশি চিনের প্রতিনিধি দলটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানম-ি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন এবং ভবনটির পার্শ্ববর্তী সিআরআইয়ের কার্যক্রমও পরিদর্শন করে। বঙ্গবন্ধু ভবন ও সিআরআই পরিদর্শনকালে চিনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। চিনের প্রতিনিধিরা সিআরআইয়ের কার্যক্রমের প্রশংসাসহ এ বিষয়ে আরও জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বেইজিংয়ে ফিরে চলতি বছর জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের দুটি প্রতিনিধি দলকে চিন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠান। চিঠিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এবং সজীব ওয়াজেদ জয় ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলকে চিন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে কবে নাগাদ প্রতিনিধি দল দুটি চিন সফরে যাবে সে বিষয়ে এখনো দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি।
জানা গেছে, আগামী এপ্রিল অথবা মে মাসে প্রতিনিধি দল দুটি পর্যায়ক্রমে চিন সফরে যেতে পারে। তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান আমাদের সময়কে বলেন, চিনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণ পেয়েছি আমরা। তারা এবার দুটি প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। একটি আওয়ামী লীগের, অন্যটি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দলের নেতারা এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও দলের জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। আশা করছি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা পাওয়ার পর আগামী এপ্রিল-মে মাসের দিকে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল চিন সফরে যেতে পারে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে চিন অন্যতম বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পর্ক অতটা ভালো না থাকলেও যত দিন যাচ্ছে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক তত গভীর হচ্ছে। তবে গত নভেম্বরে চিনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৬ সালে প্রথম চিন সফর করেন। মূলত ওই সময় থেকেই চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের সূচনা। বর্তমান সময়ের পরিক্রমায় আমাদের দুই দলের মধ্যকার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় ও গভীর হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ চিন এখন বিশ্ব রাজনীতিতে সুপার পাওয়ার। চিনের বর্তমান সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রাষ্ট্রীয়ভাবে যেমন শক্তিশালী হয়েছে, তেমনই দলীয়ভাবেও চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক সুদৃঢ় হচ্ছে।