বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছে বড় ধরনের রদবদল। পদ আঁকড়ে থাকা সুবিধাবাদী নেতাদের সরিয়ে সেখানে অভিজ্ঞ, ত্যাগী ও অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের জায়গা করে দেয়ার চিন্তা করছে দলের হাইকমান্ড। এই কাউন্সিলেই ভারমুক্ত হয়ে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সবশেষ ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ৫ম জাতীয় কাউন্সিল। ৬ বছর বাদে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিল। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দলটি। মূল মঞ্চসহ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করেছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। পাশাপাশি আমন্ত্রিত অতিথিদের যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনের জন্য নেতাকর্মীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন দলের সিনিয়র নেতারা।
Read More News
বিএনপি’র কাউন্সিলকে ঘিরে সারাদেশের নেতাকর্মী ও কোটি কোটি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা এবং প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে এ কাউন্সিলকে ঘিরে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যে কাউন্সিলের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। কাউন্সিল সফল করতে গঠিত সকল উপ-কমিটি তাদের কার্যক্রম শতভাগ সম্পন্ন করেছে।
ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেগম খালেদা জিয়া দলের চেয়ারপার্সন ও তারেক রহমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সব ঠিক থাকলে এবারের কাউন্সিলে প্রায় ৫ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হতে যাচ্ছেন পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব। বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মির্জা ফখরুল অনেক দিন জেল খেটেছেন। বার বার গ্রেফতার হয়েছেন। শারীরিক ঝুঁকি নিয়েও রাজনীতি করছেন। ভালো ইমেজ আছে। তো আমরা আশা করি তাকে ভারমুক্ত করা হবে।
সূত্রমতে, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে আসছে পরিবর্তন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া, অসুস্থ ও মৃতদের পদে আসছে নতুন মুখ। এসব পদে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সাদেক হোসেন খোকা, আব্দুল্লাহ-আল নোমান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এম ওসমান ফারুক ও বেগম সেলিমা রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে। সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব পদে আসতে পারেন রুহুল কবির রিজভী। যুগ্ম-মহাসচিব পদে শোনা যাচ্ছে ফজলুল হক মিলন, আসাদুল হাবিব দুলু, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড. আসাদুজ্জামান রিপন এবং নাজিমউদ্দিন আলমসহ কয়েকজনের নাম। দায়িত্বশীল নেতাদের মতে, পদায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাবে নেতাদের যোগ্যতা ও অতীত কর্মকা-।
হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনজন ইতোমধ্যে মৃত্যু বরণ করেছেন, দু’জন অসুস্থ। যার ফলে নতুন মুখ আসা স্বাভাবিক। কারা আসবে সেটা নির্ধারণ করবেন আমাদের কাউন্সিলররা।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, বিএনপিকে অবশ্যই তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে একটি বেগবান কমিটি হবে। আর যারা নেতৃত্ব দেবেন তারা সব পরীক্ষিত নেতা-কর্মী হবেন।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে দেখা যেতে পারে মো. শাহজাহান, মিজানুর রহমান মিনু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অধ্যাপক এম এ মান্নান, রুহুল আলম চৌধুরী, জয়নুল আবদীন ফারুক, আব্দুস সালাম, আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, নূরে আরা সাফা ও গাজী মাজহারুল আনোয়ারসহ কয়েকজনকে।
হান্নান শাহ আরো বলেন, দলে যারা বয়ঃজৈষ্ঠ আছেন। যাদের দীর্ঘদিন দলের নেতাকর্মীদের সম্পর্কে জ্ঞান আছে তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনে পরামর্শ নেবেন।
উপদেষ্টা পরিষদে থাকতে পারেন অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ ও ডা. জাফরুল্লাহ। কাউন্সিলে প্রভাবশালী অথচ বিতর্কিত কয়েকজন নেতা সাইডবেঞ্চে চলে যেতে পারেন বলেও আভাস দিলেন দায়িত্বশীল এই নেতা।