ইশরত আখন্দ ছিলেন বাংলাদেশের নাগরিক। গত ১জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় কয়েকজন ইতালিয়ান ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে ‘হলে আর্টিসান বেকারি কাফে রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন। জঙ্গিদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন ইশরত।
ইসরাত আপুর সাথে আমার শেষ কথা হয়েছিল এপ্রিলের শেষের দিকে। তিনি সব সময় আমাকে একটা কথা বলতেন যে, এত সুন্দর ছবি আঁকে সে কেন আইনের (ল) মত এত কঠিন বিষয় নিয়ে পড়তে গেল, আমি একটু হেসে অন্য কথায় চলে গেলাম। কারণ এর উত্তরটা আমার আজ ও অজানা।
এই শিল্পমনা মানুষটি ছিল অসাধারণ, সুরুচিপূর্ণ এবং প্রতিভাবান। ঢাকার ওসমান গনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই কৃতী ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোশ্যাল সায়েন্সে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করেন। এর পর অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট থেকে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট-এর ডিগ্রি নিয়ে তিনি শুরু করেন তাঁর কর্মজীবন। তিনি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার হিউম্যান রিসোর্স ডিরেক্টর পদে ছিলেন। কিন্তু এখানেই ওঁর পরিচয় শেষ হয় না। ইশরত আখন্দ ছিলেন বাংলাদেশের শিশুশ্রম বিরোধী অ্যাক্টিভিস্টদের একজন পুরোধা। তাঁর একক প্রচেষ্টায় দেশের একটি বিরাট মানবাধিকার-বিরোধী শিশুশ্রম নেটওয়র্ক বন্ধ হয়। শুধু তাই নয়, সেই শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, তাদের পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্যের সংস্থান করে দেওয়ার মতো জটিল কাজ করেন।
ইসরাত আপুর সাথে যে খুব দেখা হতো তা নয়। কিন্তু যখন দেখা হতো তখন এমন ভাবে কথা বলত মনে হতো এইতো কালও একসাথে আড্ডা দিয়েছি। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, আর কোন দিনও এই প্রিয় মানুষটির সাথে আড্ডা দেওয়া হবে না, কপি পান করা হবে না।
অনেকসময় আর্ট গ্যালারিতে গল্পের সাথে সাথে আমি তাকে প্রশ্ন করতাম, এত কিছু একসাথে ম্যানেজ কর কিভাবে? আপু হেসে বলতো, এই যে তোমরা এতো ভালবাস তাই। সত্যই আমাদের ভালবাসাকে তুমি জয় করে গেলে।
সেদিন ইসরাত আপুর জন্য আলোর প্রদীপ জ্বালাতে গিযে মনে হচ্ছিল আসলে কি তুমি স্মৃতি হয়ে গেলে। আমার ঠিক সেই মহুর্তে জেন সব কিছু থমকে গেল, তুমি সত্যি ভালবেসে আমাদের রিনি করে গেলে। নিশ্চয়ই তোমার মতো মানুষদেরই জয় হবে, থেমে যাবে সারা পৃথিবীর উপর এই ভয়ংকর আগ্রাসন।
Read More News