নামের আগে শোভা পেতে লাগল ‘কালো’ বিশেষণ : বিপাশা

ভারতের ইউনিলিভার কোম্পানির ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ ক্রিম থেকে চিরতরে বাদ যেতে চলেছে ‘ফেয়ার’ কথাটি। অর্থাৎ ফর্সা হলেই তিনি সুন্দরী, আর গায়ের রং কালো হলে নয় এই ধারণা থেকে মুক্তি পেতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা নিয়েও সারা বিশ্বে যে নিন্দার ঝড় উঠেছে সেটিও এই ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক।

এ দেশে চিরকালই ফর্সা গায়ের রঙের মেয়েদের কদর বেশি। আজও খবরের কাগজে বিয়ের পাত্রী খোঁজা হয় সুন্দরী ও গায়ের ফর্সা এই শর্ত দিয়ে। কালো মেয়ের নাকি এ দেশে বিয়ে হয় না, এমনকি সে নাকি ভাল জায়গায় চাকরিও পায়না, তা সে যতই শিক্ষিত হোক না কেন। এই ধারণাকেই তো আমরা চিরকাল বহন করে চলেছি। তবে এমন ধারণা যে শুধুই আম আদমির তা কিন্তু নয়। এই দলে রয়েছেন সেলিব্রিটিরাও। এমনই কথা সদ্য ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন বলিউডের বং বিউটি অভিনেত্রী বিপাশা বসু।

চোখে আঙুল দিয়ে যোগ্যতার বিচার করা হয়েছে গায়ের রঙে। বেশ কয়েক বছর আগে তাঁরই সহকর্মী এক ফর্সা ত্বকের অভিনেত্রী বিপাশাকে ডেকেছিলেন ‘কালি বিল্লি’ বলে। তখন চুপ করেছিলেন বিপাশা। তবে এখন আর চুপ থাকতে পারেননি। ইনস্টাগ্রামের পোস্টে তিনি লিখছেন, ‘ছোট থেকে, সেই ছোট থেকে বোনের সঙ্গে আমাকে তুলনা করে বলা হত, সোনির থেকে বনি অনেক কালো না? আমার পরিজন, আত্মীয় সবার মুখেই এক কথা। বনি কালো’। বনির যেন পরিচয় হয়ে উঠেছিল তাঁর গায়ের রং। ছোট্ট বনি মুম্বই এল। সুপারমডেল প্রতিযোগিতায় ছিনিয়ে নিল প্রথম স্থান। বিপাশা ভেবেছিলেন এ বার হয়তো তাঁর গুণের কদর হবে। গুণের কদর হল নিঃসন্দেহে। তবে, পরের দিনই খবরের কাগজে বড় বড় করে ছাপা হল, ‘ডাস্কি গার্ল ফ্রম কলকাতা ইজ দ্য উইনার’। অর্থাৎ, কলকাতার কালো মেয়েই বিজয়ী। পরিশ্রমী নয়, সুন্দরী নয়, বিপাশার নামের আগে শোভা পেতে লাগল ‘কালো’ বিশেষণ।
Read More News

২০০৩ থেকে ০৪। একের পর এক হিট হচ্ছে বিপাশার ছবি। তাঁর সেক্স অ্যাপিল হিল্লোল তুলেছে বক্সঅফিসে। জিসম, রাজ, আজনাবি, রেস– বিপাশা তখন এক নম্বর নায়িকা বলিউডের। কিন্তু তাতে কি? মিডিয়া বড় বড় করে ছেপে দিল তাঁর গায়ের র‌ংই তাঁর এত সেক্সি হওয়ার ইউএসপি।

সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফর্সা করে দেওয়ার দাবি করা ব্র্যান্ডগুলো বিপাশার কাছে কোটি কোটি টাকার অফার নিয়ে গিয়েছিল। কালো নায়িকা তাঁদের ক্রিম মেখে রাতারতি ফর্সা হয়ে যাচ্ছে, এ একবার দেখাতে পারলেই যে হিট হবে সেই ক্রিম। কোটি কোটি কামাবে সংস্থা। কিন্তু মুখের উপর না বলেছিলেন বিপাশা। বাঁচতে চেয়েছিলেন নিজের শর্তে। একটা দেশে যেখানে বেশির ভাগ মানুষের রং কালো সেখানে ফেয়ার কী করে লাভলি হয়ে গেল তা আজও বুঝতে পারেননি তিনি। দেরিতে হলেও ইউনিলিভারের এই পদক্ষেপে উচ্ছ্বসিত সারা দেশ। সুন্দরের সংজ্ঞা কি তবে পালটাবে এবার?

বিপাশা বসু ১৯৭৯ সালের ৭ জানুয়ারি নয়াদিল্লিতে বাঙালি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার দুই বোন আছে – বিদিশা ও বিজয়েতা। তন্মধ্যে বিদিশার পরেই বিপাশার অবস্থান। নয়াদিল্লিতে জন্মগ্রহণ করলেও পরবর্তীকালে তিনি তার বাবা-মায়ের সাথে কলকাতায় ফিরে আসেন। বিপাশা বিজ্ঞান নিয়ে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পরবর্তীকালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ভবানীপুর গুজরাতি এডুকেশন সোসাইটি কলেজে বাণিজ্য বিভাগে অধ্যয়ন করেন। কলকাতা থাকাকালে তিনি সাময়িক পেশা হিসেবে মডেলিং এবং র‌্যাম্প শো-তে অংশ নেন। ১৯৯৬ সালে কলকাতায় বিখ্যাত মডেল মেহের জেসিয়া’র সাথে পরিচিত হন। জেসিয়া বিপাশাকে গোদ্‌রেজ সিন্থল সুপারমডেল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। এতে বিপাশা বসু অংশ নিয়ে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন।

https://www.instagram.com/p/CB4iGuCjjlE/?utm_source=ig_embed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *