সংস্কার নিয়ে উত্তাপ মাঠ প্রশাসন থেকে সচিবালয় পর্যন্ত অস্থিরতা খসড়া প্রস্তাবের প্রতিবাদ

প্রশাসনে আবার শুরু হয়েছে অস্থিরতা। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে নতুন করে এ অস্থিতরা শুরু হয় প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তার মধ্যে। ইতোমধ্যে নানাভাবে প্রতিবাদ করছেন তাঁরা। প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বাসা) এবং দেশের সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যাচ থেকেও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত এ অস্থিরতার প্রশমন না করলে এবং অস্থিরতা চলমান থাকলে সরকারের সবকিছুই ঝুঁকিতে পড়ে যাবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও সাবেক কর্মকর্তাদের।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে বর্তমান জনপ্রশাসন ঢেলে সাজাতে সুন্দর গঠনমূলক প্রস্তাব দেওয়ার জন্য। এ কমিশন বিতর্ক ও ক্ষোভ তৈরি করেছে। কমিশন সরকারে উপসচিব ও যুগ্মসচিব হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ও অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের অনুপাত ৫০ ঃ ৫০ করার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার নিয়ে পৃথক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করার উদ্যোগ নিচ্ছে এমন খবরে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ প্রশাসনসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারাও। কমিশনকে খসড়া প্রস্তাব থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
Read More News

১৭ ডিসেম্বর সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এ খসড়া প্রস্তাবের কথা তুলে ধরার পরই শুরু হয় নানা রকম সমালোচনা। বিভিন্ন ব্যাচের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গ্রুপে ওঠে সমালোচনার ঝড়। জরুরি বৈঠক করে প্রতিবাদ জানায় বাসা। খসড়া সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তারাও। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এসব কার্যক্রম বা বাড়তি কথার কারণে প্রশাসনে অস্থিরতা সরকারেরও ক্ষতির কারণ হবে। ইতোমধ্যে একটা ঝুঁকিতে কিন্তু পড়ে গেছে। সবাই প্রতিবাদ করছে। অতিকথনে অস্থিরতা বাড়ানো হচ্ছে কর্মকর্তাদের মধ্যে। এতে কর্মকর্তারাও কাজে মনোযোগ হারাচ্ছেন। এসব দ্রতই সমাধান দরকার। এসব ক্যাডার ভাগাভাগি অন্য কোথাও নেই। কোটা যেহেতু উঠে গেছে, সুতরাং এ ভাগাভাগি আগে যতটুকু ছিল সেটাও উঠিয়ে দেওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে ফরেন সেক্রেটারি হয় অ্যাডমিন ক্যাডার থেকে।

খসড়া প্রস্তাবের সমালোচনা করে ২৮ ব্যাচের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সবার জন্য সব ক্যাডারে যাওয়া উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক তাহলে। আমরাও ফরেন বা ট্যাক্স ক্যাডারে যাব। ট্যাক্স ক্যাডার কর্মকর্তারা রাজস্ব আদায় করে বলে তারা বছরে কয়েক লাখ টানা ইনসেনটিভ পান। আমাদের এসি ল্যান্ডরা কি রাজস্ব আদায় করেন না? তাদের ইনসেনটিভও নেই।’

সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, ‘ক্যাডার ভাগাভাগি করা পৃথিবীর কোথাও নেই। কেউ পরীক্ষায় ভালো না করে সিরিয়ালে নিচের দিকের অন্য ক্যাডারে যোগ দিলেন। প্রথা অনুযায়ী তিনি কয়েক বছর পর ক্যাডার পরিবর্তন করে প্রথম সারির ক্যাডারে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে থাকেন। এটাই তো বৈষম্য। রাষ্ট্রপতির কোটারও রাজনৈতিক ব্যবহার হয়েছে, এসবও রাখার দরকার নেই। নিয়োগের সময় যে যেই ক্যাডার পাবে পরবর্তীকালে সে ওই ক্যাডারে যে পদে থাকবে যোগ্যতা অনুসারে পদোন্নতি পাবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *