আড়াই বছরের শিশু শাহীর রাইয়ান। বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায়। হাতে-পায়ে লালচে ফোলা। সেই সঙ্গে ২০ দিনের বেশি কাশি। কাশিতে কফ না থাকায় অ্যালার্জির পরীক্ষা করাতে বলেন চিকিৎসক। পরীক্ষায় দেখা যায়, শিশুটির অ্যালার্জির মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১৭ গুণ বেশি। চিকিৎসক শিশুটিকে ঠান্ডা-কাশির ওষুধ না দিয়ে এক মাসের অ্যালার্জির চিকিৎসা দেন। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ আরিফ চৌধুরী শিশুটির অভিভাবকদের জানান, ধুলাদূষণের কারণেই এই সমস্যা। সাবধানে না রাখলে এটা পরে দীর্ঘমেয়াদী অ্যাজমায় রূপ নিতে পারে। শিশুটির নানি আফরোজা বেগম বলেন, চিকিৎসায় শাহীর সুস্থ হয়ে উঠলেও একদিন ঘরের বাইরে বের হলেই কাশি শুরু হয়। চিকিৎসক ওকে সম্ভব হলে কয়েকটা বছর গ্রামে রেখে বড় করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জন্মের পর থেকে দূষিত বায়ুতে বড় হওয়ায় ওর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধুলায় অ্যালার্জি বেড়ে যায়। এটা ওর জন্য খুবই বিপজ্জনক। স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। Read More News
রাজধানী ঢাকায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বায়ুদূষণ। বিশ্বের বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনে নভেম্বর থেকে প্রায়ই বিশ্বের মধ্যে বায়ুদূষণের শীর্ষে উঠে আসছে জনবহুল শহরটির নাম। কখনো বাতাস ৪০ গুণ পর্যন্ত দূষিত হয়ে উঠছে। এতে বাড়ছে রোগব্যাধি। হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার। তৈরি হচ্ছে অসুস্থ প্রজন্ম। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৬ বছর ৮ মাস কমে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বায়ুদূষণের কারণে সংক্রামক-অসংক্রামক দুই ধরনের রোগই বাড়ছে। শুরুটা হয় শ্বাসতন্ত্রের রোগ দিয়ে। যেমন- হাঁচি, কাশি, সর্দি, শ্বাসের টান বা হাঁপানি, অ্যালার্জিক কফ, অ্যালার্জিক অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ফুসফুস ক্যান্সারের মতো রোগগুলো হয়। অন্যদিকে বায়ুতে ভাসমান ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা শ্বাসতন্ত্র দিয়ে রক্তস্রোতে মিশে লিভার, কিডনিসহ বিপাক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। ফলে কিডনি বিকল, লিভার বিকলসহ নানা জাতীয় ক্যান্সার বাড়ছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, বায়ুদূষণ রোধে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ধুলা, কালোধোঁয়া, ইটভাটা এবং কলকারখানার দূষণ কমাতে কাজ করা হবে। বায়ুদূষণকারী পুরনো বাস তুলে স্ক্রাপ করা হবে। এ ছাড়া আশুলিয়াকে ইটভাটামুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হতে পারে।